বাংলাদেশে আমরা প্রায়ই শুনি যে দেশ দ্রুত ‘ক্যাশলেস সোসাইটি’ বা নগদবিহীন সমাজের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা কি আসলেই তাই? বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত ২০২৪ সালের সর্বশেষ প্রতিবেদন আমাদের আর্থিক অভ্যাস সম্পর্কে কিছু আশ্চর্যজনক ও বিপরীতধর্মী চিত্র তুলে ধরেছে যা প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে।
২০২৪ সাল বাংলাদেশের পেমেন্ট ব্যবস্থার জন্য একটি কৌশলগত মাইলফলক। প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, নিয়ন্ত্রক সংস্কার এবং ব্যবহারকারীদের ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল চাহিদার সমন্বয়ে এই খাতটি এক যুগান্তকারী রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, প্রবৃদ্ধি এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তির জন্য একটি আধুনিক, নিরাপদ ও দক্ষ পেমেন্ট ইকোসিস্টেম অপরিহার্য। এই প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্ট (PSD) একটি শক্তিশালী ও আন্তঃকার্যক্ষম (interoperable) ডিজিটাল অবকাঠামো তৈরিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে, যার মূল লক্ষ্য হলো নগদ টাকার ওপর নির্ভরতা কমিয়ে একটি ক্যাশলেস অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করা এবং সকল নাগরিকের জন্য আর্থিক সেবা সহজলভ্য করা।
এই বিশ্লেষণটি মূলত বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাদেশ পেমেন্ট সিস্টেমস রিপোর্ট ২০২৪ এর ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। এই প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য হলো ২০২৪ সালের পেমেন্ট ল্যান্ডস্কেপের প্রধান প্রবণতা, চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগগুলো চিহ্নিত করা, যা নীতিনির্ধারক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ফিনটেক উদ্যোক্তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত দিকনির্দেশনা প্রদান করবে। এই কৌশলগত প্যারাডক্স-এর মূল কারণগুলো বোঝার জন্য, পরবর্তী অধ্যায়ে আমরা সেইসব কোর পেমেন্ট প্ল্যাটফর্মগুলোর পারফরম্যান্স পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করব, যা এই সিস্টেমের মেরুদণ্ড গঠন করে।

Table of Contents
১. ডিজিটাল প্যারাডক্স: লেনদেন বাড়ছে, কিন্তু নগদ টাকার ব্যবহার বাড়ছে আরও দ্রুত
২০২৪ সালের ডেটা একটি অদ্ভুত প্যারাডক্স তুলে ধরেছে। যদিও ডিজিটাল লেনদেনের মোট সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু মোট লেনদেনের জগতে এর অংশীদারিত্ব আসলে কমে গেছে।
বাংলাদেশের পেমেন্ট ইকোসিস্টেম বর্তমানে একটি দ্বৈত গতিপ্রকৃতির মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে, যেখানে ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার এবং প্রচলিত নন-ডিজিটাল পদ্ধতির অব্যাহত প্রভাব—উভয়ই বিদ্যমান। এই দ্বৈততা বিনিয়োগকারী এবং নীতিনির্ধারকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক, কারণ এটি একদিকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ক্রমবর্ধমান গ্রহণযোগ্যতা নির্দেশ করে, অন্যদিকে উচ্চ-মূল্যের লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রচলিত পদ্ধতির ওপর নির্ভরতাও প্রকাশ করে। ২০২৪ সালের ডেটা এই প্রবণতাটিকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে, যেখানে প্রথাগত পেমেন্ট পদ্ধতির একটি পুনরুত্থান লক্ষ্য করা গেছে।
ডিসেম্বর ২০২৩ থেকে ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত ডিজিটাল এবং নন-ডিজিটাল লেনদেনের তুলনামূলক চিত্রটি নিম্নরূপ:
- মোট লেনদেনের পরিমাণে ডিজিটাল পদ্ধতির অংশ ৫১% থেকে কমে ৪৭% হয়েছে।
- বিপরীতে, অ-ডিজিটাল (নগদ, চেক ইত্যাদি) লেনদেনের অংশ ৪৯% থেকে বেড়ে ৫৩% হয়েছে।
- অ-ডিজিটাল লেনদেনের আর্থিক মূল্যের অংশও ৭১% থেকে বেড়ে ৭২% হয়েছে।
• লেনদেনের সংখ্যা (Volume): এক বছরে ডিজিটাল লেনদেনের সংখ্যা ৩৬৬.৭ মিলিয়ন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৪০৩.১৩ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। তবে, একই সময়ে নন-ডিজিটাল লেনদেনের সংখ্যা ৩৪৬.২ মিলিয়ন থেকে ৪৫৪.৯ মিলিয়নে পৌঁছানোর কারণে মোট লেনদেনে ডিজিটালের অংশ ৫১% থেকে কমে ৪৭% হয়েছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, যদিও ডিজিটাল লেনদেন বাড়ছে, নন-ডিজিটাল লেনদেন আরও দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
• লেনদেনের মূল্য (Value): ডিজিটাল লেনদেনের মূল্য ৭৫১.৪ বিলিয়ন টাকা থেকে সামান্য বৃদ্ধি পেয়ে ৭৬৩.৪ বিলিয়ন টাকায় পৌঁছেছে। কিন্তু নন-ডিজিটাল লেনদেনের মূল্য ১,৮৫৩.৯ বিলিয়ন টাকা থেকে ১,৯৫৮.৬ বিলিয়ন টাকায় উন্নীত হওয়ায়, মোট মূল্যে ডিজিটালের অংশ ২৯% থেকে কমে ২৮% হয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে দেশের অর্থনৈতিক লেনদেনের সিংহভাগ এখনও নন-ডিজিটাল চ্যানেলের মাধ্যমে সম্পন্ন হচ্ছে।
মাসভিত্তিক প্রবণতা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, লেনদেনের সংখ্যার দিক থেকে ডিজিটাল চ্যানেলগুলো এগিয়ে থাকলেও (৪৭% থেকে ৫৬% শেয়ার), লেনদেনের মূল্যের দিক থেকে নন-ডিজিটাল চ্যানেলগুলো (৬০% থেকে ৮০% শেয়ার) একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রেখেছে। এর প্রধান কারণ হলো, সাধারণ মানুষ দৈনন্দিন ছোটখাটো কেনাকাটা, বিল পরিশোধ বা মোবাইল রিচার্জের মতো ক্ষুদ্র মূল্যের লেনদেনের জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছে। অন্যদিকে, বড় অঙ্কের প্রাতিষ্ঠানিক, কর্পোরেট এবং সরকারি লেনদেনের ক্ষেত্রে কাগুজে নথি এবং প্রচলিত পদ্ধতির প্রতি একটি দৃঢ় পক্ষপাতিত্ব বিদ্যমান, যা এক ধরনের আচরণগত জড়তা (behavioral inertia) নির্দেশ করে।
এই দ্বৈত প্রবণতার কৌশলগত প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চ-মূল্যের লেনদেন ডিজিটালাইজড না হওয়া একটি সুস্পষ্ট “ডিজিটাল অ্যাডাপশন গ্যাপ” বা ডিজিটাল অভিযোজন ঘাটতি নির্দেশ করে। এই ঘাটতি পূরণ করতে না পারলে একটি সম্পূর্ণ ক্যাশলেস অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ও কর্পোরেট পর্যায়ে ডিজিটাল পেমেন্ট বাধ্যতামূলক করা এবং ব্যবহারকারীদের আস্থা অর্জনের জন্য নিরাপদ ও দক্ষ প্ল্যাটফর্ম নিশ্চিত করা অপরিহার্য।
এর সহজ বিশ্লেষণ হলো, মানুষ ছোট ও ঘন ঘন কেনাকাটার জন্য ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করছে, কিন্তু বড় অংকের লেনদেন এখনও চেক এবং কাউন্টারে নগদ টাকার উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
এই প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালিত কোর পেমেন্ট প্ল্যাটফর্মগুলোর পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করা অত্যন্ত জরুরি, যা পরবর্তী বিভাগে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
২. কোর পেমেন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার: কেন্দ্রীয় প্ল্যাটফর্মগুলোর পারফরম্যান্স মূল্যায়ন
বাংলাদেশের আর্থিক ব্যবস্থার মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করে বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালিত পাঁচটি কেন্দ্রীয় পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম: বাংলাদেশ অটোমেটেড চেক প্রসেসিং সিস্টেম (BACPS), বাংলাদেশ রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট সিস্টেম (BD-RTGS), বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার নেটওয়ার্ক (BEFTN), ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ বাংলাদেশ (NPSB), এবং ইন্টারঅপারেবল ডিজিটাল ট্রানজেকশন প্ল্যাটফর্ম (IDTP)। এই প্ল্যাটফর্মগুলো দেশের বৃহৎ এবং খুচরা উভয় প্রকারের লেনদেনের নিরাপত্তা, গতি এবং নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করে। ২০২৪ সালে এই কোর ইনফ্রাস্ট্রাকচারের পারফরম্যান্স দেশের ডিজিটাল অগ্রযাত্রার চিত্র তুলে ধরে।
২.১. বাংলাদেশ অটোমেটেড চেক প্রসেসিং সিস্টেম (BACPS)
ডিজিটাল পেমেন্টের ব্যাপক প্রসার সত্ত্বেও, কাগুজে লেনদেনের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে BACPS এখনও তার গুরুত্ব বজায় রেখেছে। বিশেষ করে উচ্চ-মূল্যের প্রাতিষ্ঠানিক এবং বাণিজ্যিক লেনদেনের ক্ষেত্রে চেকের ব্যবহার এখনও প্রচলিত। ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে এই সিস্টেমের মাধ্যমে প্রায় ১০,৪২২ হাজার ইন্সট্রুমেন্ট প্রক্রিয়াকরণ করা হয়, যার মোট আর্থিক মূল্য ছিল প্রায় ১১,৭৫৪ বিলিয়ন টাকা। তবে, বছরের দ্বিতীয়ার্ধে প্রক্রিয়াকৃত ইন্সট্রুমেন্টের সংখ্যা ও মূল্য উভয়ই কিছুটা হ্রাস পায়, যা ডিজিটাল পদ্ধতির ক্রমবর্ধমান প্রভাবের ইঙ্গিত দেয়।
২.২. বাংলাদেশ রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট সিস্টেম (BD-RTGS)
উচ্চ-মূল্যের এবং সময়-সংবেদনশীল লেনদেনের জন্য BD-RTGS দেশের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম। এটি ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে তাৎক্ষণিক তহবিল স্থানান্তর নিশ্চিত করে, যা আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক। ২০২৪ সালের দ্বিতীয়ার্ধে এই সিস্টেমের মাধ্যমে প্রায় ৫,৩৯৩ হাজার লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে, যার মোট মূল্য ছিল ২৬,৭২১ বিলিয়ন টাকা।
সাম্প্রতিক সময়ে BD-RTGS সিস্টেমে বেশ কিছু কৌশলগত আপগ্রেড করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:
• ISO 20022 মেসেজিং স্ট্যান্ডার্ড গ্রহণ, যা লেনদেনের ডেটা আরও সমৃদ্ধ ও কাঠামোগত করেছে।
• ২৪/৭ অপারেশন পরিচালনার জন্য প্রস্তুতি, যা ভবিষ্যতে নিরবচ্ছিন্ন লেনদেনের সুযোগ তৈরি করবে।
• বৈদেশিক মুদ্রা (যেমন: USD, EUR, CNY, JPY, GBP, CAD) লেনদেনের সুবিধা, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে সহজতর করছে। এই উদ্যোগগুলোর ফলে প্ল্যাটফর্মটির জনপ্রিয়তা এবং কার্যকারিতা উভয়ই বৃদ্ধি পেয়েছে।
২.৩. বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার নেটওয়ার্ক (Nikash-BEFTN)
BEFTN দেশের খুচরা এবং প্রাতিষ্ঠানিক পেমেন্ট ইকোসিস্টেমের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি ব্যাচ ভিত্তিতে তহবিল স্থানান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে, যা বেতন, পেনশন, সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা, সরকারি বিল পরিশোধ এবং বিদেশি রেমিট্যান্স বিতরণের মতো নিয়মিত লেনদেনের জন্য আদর্শ। ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে, প্রায় ১২৬,৯৬১ হাজার ক্রেডিট ট্রান্সফারের মাধ্যমে প্রায় ৩,৭৪৬ বিলিয়ন টাকা এবং ২,৯৩৯ হাজার ডেবিট ট্রান্সফারের মাধ্যমে প্রায় ৯৭৩ বিলিয়ন টাকা লেনদেন হয়েছে। ক্রেডিট ট্রান্সফারের এই বিশাল সংখ্যা প্রমাণ করে যে এটি প্রাতিষ্ঠানিক অর্থ বিতরণের একটি প্রাথমিক মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
২.৪. ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ বাংলাদেশ (NPSB)
NPSB দেশের বিভিন্ন ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আন্তঃকার্যক্ষমতা বা interoperability তৈরিতে একটি বৈপ্লবিক ভূমিকা পালন করেছে। এটি ATM, POS, QR কোড এবং ইন্টারনেট ব্যাংকিং ফান্ড ট্রান্সফার (IBFT) চ্যানেলগুলোকে একটি সাধারণ প্ল্যাটফর্মের অধীনে সংযুক্ত করেছে। ২০২৪ সালে NPSB-এর মাধ্যমে ১৫৪ মিলিয়নেরও বেশি লেনদেন নিষ্পত্তি হয়েছে, যার মোট মূল্য ছিল ২,৭১১ বিলিয়ন টাকা।
NPSB-এর অধীনে IBFT (ইন্টারনেট ব্যাংকিং ফান্ড ট্রান্সফার)-এর উত্থান একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত পরিবর্তন। এটি এখন লেনদেনের মূল্যের ৮০% এবং সংখ্যার ৩৪% দখল করে নিয়েছে। IBFT-এর জনপ্রিয়তা প্রমাণ করে যে গ্রাহকরা তাৎক্ষণিক এবং নিরাপদ ডিজিটাল ফান্ড ট্রান্সফারের দিকে ঝুঁকছে, যা নগদ উত্তোলন এবং ব্যাংকের কাউন্টারে গিয়ে লেনদেনের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস করছে। এটি “ক্যাশলেস ইকোনমি” অর্জনের পথে একটি শক্তিশালী সূচক। উল্লেখ্য, অ্যাপেন্ডিক্সের বিস্তারিত ডেটা বিশ্লেষণ করলে মোট লেনদেনের মূল্য আরও বেশি হতে পারে, যা ইকোসিস্টেমের ডেটা সমন্বয়ের জটিলতাকে নির্দেশ করে।
২.৫. PSP এবং PSO লাইসেন্স
ফিনটেক উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক PSP এবং PSO লাইসেন্স প্রদান করছে, যা দেশে নতুন নতুন ডিজিটাল ওয়ালেট এবং পেমেন্ট গেটওয়ে সেবার প্রসারে সহায়তা করছে।
• PSP-এর পারফরম্যান্স: ২০২৪ সালে PSP প্ল্যাটফর্মগুলোর মাধ্যমে ২৪.৪ মিলিয়ন লেনদেন প্রক্রিয়াকরণ করা হয়েছে, যার মোট মূল্য ছিল প্রায় ১৭.৯ বিলিয়ন টাকা। তবে, এই খাতে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো লিঙ্গ বৈষম্য। পুরুষ ও নারী ব্যবহারকারীর অনুপাত ৯৪:৬, যা নারীদের ডিজিটাল আর্থিক সেবায় অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে একটি বড় ঘাটতি নির্দেশ করে। এই বৈষম্য দূর করতে নারীকেন্দ্রিক পণ্য ও সেবা চালু করা প্রয়োজন।
• PSO-এর পারফরম্যান্স: PSO-গুলো মূলত মার্চেন্ট পেমেন্ট এবং পেমেন্ট গেটওয়ে সেবা প্রদান করে। ২০২৪ সালে তাদের মাধ্যমে ৩৫.১ মিলিয়ন লেনদেন হয়েছে, যার মূল্য ছিল ৪৫.৩ বিলিয়ন টাকা। তবে, এই বাজারটি অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত। একটি মাত্র PSO ৯৮% মার্চেন্ট অনবোর্ড করেছে। এই চরম বাজার কেন্দ্রীকরণ একটি উল্লেখযোগ্য সিস্টেমিক ঝুঁকি তৈরি করে, যা একটি একক ব্যর্থতার কেন্দ্রবিন্দু (single point of failure) সৃষ্টি করতে পারে এবং মূল্য ও সেবার উদ্ভাবনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। এই পরিস্থিতি একটি অধিক প্রতিযোগী ও স্থিতিশীল মার্চেন্ট ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার হস্তক্ষেপ দাবি করে।
খুচরা পেমেন্ট ব্যবস্থার এই চিত্র একদিকে যেমন সম্ভাবনা প্রকাশ করে, তেমনই কিছু কাঠামোগত চ্যালেঞ্জও তুলে ধরে। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা পরবর্তী অংশে আলোচনা করা হয়েছে।
৩. এমএফএস (MFS) এর বিস্ময়: ডিজিটাল ওয়ালেট, নাকি ক্যাশ টাকা লেনদেনের ডিজিটাল পাইপলাইন?
মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস (MFS) নিঃসন্দেহে জনপ্রিয়, কিন্তু ডেটা এর ব্যবহারের একটি অবাক করার মতো প্যাটার্ন প্রকাশ করে। মূল বিস্ময়কর তথ্যটি হলো, MFS ইকোসিস্টেমের মধ্যেই ডিজিটাল লেনদেনের প্রবণতা কমে গিয়ে ক্যাশ-ভিত্তিক আচরণের দিকে একটি বড় পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, MFS ডিজিটাল লেনদেনের অংশীদারিত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে—লেনদেনের পরিমাণে ৬০.৬ শতাংশ থেকে ৫২.৫ শতাংশে এবং আর্থিক মূল্যে ৪৯.৫ শতাংশ থেকে ৩৮.৯ শতাংশে নেমে এসেছে।
এই পরিবর্তনের কারণ স্পষ্ট হয় যখন আমরা এর ব্যবহার দেখি। ২০২৪ সালের MFS লেনদেনের আর্থিক মূল্য অনুসারে, এর একটি বিশাল অংশ সরাসরি ডিজিটাল পেমেন্টের (যেমন দোকানে বিল দেওয়া) জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে না, বরং এটি ভৌত নগদ টাকা সিস্টেমের ভেতরে আনা এবং বাইরে বের করার কাজেই বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমন:
- ক্যাশ-আউট: ৩২%
- ক্যাশ-ইন: ৩০%
- ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি (P2P) স্থানান্তর: ২৬%
- দোকানে বা মার্চেন্ট পেমেন্ট: মাত্র ৫%
কৌশলগত তাৎপর্য: এই ডেটা স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে, MFS ইকোসিস্টেমের অভ্যন্তরে নগদ-ভিত্তিক আচরণের দিকে একটি ক্রমবর্ধমান ঝোঁক রয়েছে। গ্রাহকরা ডিজিটাল মাধ্যমে টাকা গ্রহণ করলেও প্রায়শই তা এজেন্টের কাছ থেকে নগদে তুলে নেন। এর মানে হলো, MFS দোকানে কেনাকাটার মাধ্যম হিসেবে নগদকে প্রতিস্থাপন করার চেয়ে রেমিট্যান্স এবং সহজে নগদ টাকা হাতে পাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা হিসেবে কাজ করছে। এর ফলে MFS আর্থিক অন্তর্ভুক্তির একটি মাধ্যম হওয়া সত্ত্বেও, এটি নগদ টাকার ওপর নির্ভরতা কমানোর পরিবর্তে তা আরও শক্তিশালী করছে। এই প্রবণতাটি একটি সম্পূর্ণ ডিজিটাল লেনদেন চক্র (digital transaction loop) তৈরির পথে প্রধান অন্তরায়।
• নেটওয়ার্কের বিস্তার: ডিসেম্বর ২০২৪ শেষে, MFS গ্রাহকের সংখ্যা ২৩৯ মিলিয়নে এবং এজেন্টের সংখ্যা ১.৮ মিলিয়নে পৌঁছেছে, যা এর দেশব্যাপী শক্তিশালী নেটওয়ার্কের পরিচায়ক।
৪. নীরব নায়ক: উচ্চ মূল্যের ডিজিটাল পেমেন্টে ইন্টারনেট ব্যাংকিং ফান্ড ট্রান্সফার (IBFT) এর আধিপত্য
বাংলাদেশের ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমের একটি শক্তিশালী কিন্তু কম আলোচিত মাধ্যম হলো ইন্টারনেট ব্যাংকিং ফান্ড ট্রান্সফার বা IBFT। ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ বাংলাদেশ (NPSB) প্ল্যাটফর্মে এটিএম লেনদেনের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হলেও, আর্থিক মূল্যের দিক থেকে IBFT निर्विवादভাবে শীর্ষে।
ডেটা একটি দারুণ বৈপরীত্য তুলে ধরে: NPSB-এর মোট লেনদেনের পরিমাণে এটিএমের অংশ ৫৩% হলেও, IBFT-এর অংশ মাত্র ৩৪%। কিন্তু আর্থিক মূল্যের দিক থেকে চিত্রটি সম্পূর্ণ উল্টো। NPSB প্ল্যাটফর্মের মোট লেনদেনের আর্থিক মূল্যের একাই ৮০ শতাংশ আসে IBFT থেকে।
এই তথ্য প্রমাণ করে যে ব্যবহারকারীদের মধ্যে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে বড় অংকের টাকা ডিজিটালভাবে স্থানান্তর করার ক্ষেত্রে আস্থা দৃঢ়ভাবে বাড়ছে। বড় অংকের লেনদেনের জন্য এটি একটি সত্যিকারের ক্যাশলেস অর্থনীতির দিকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
৫. চেকের দিন শেষ হয়নি: কাগজের অদম্য শক্তি
অনেকে মনে করেন চেক একটি সেকেলে প্রযুক্তি, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। বাংলাদেশ অটোমেটেড চেক প্রসেসিং সিস্টেম (BACPS) দেশের পেমেন্ট অবকাঠামোর একটি ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে এখনও বিদ্যমান।
২০২৪ সালে এই সিস্টেমের মাধ্যমে প্রক্রিয়াকৃত লেনদেনের আর্থিক পরিমাণ ছিল বিপুল: বছরের প্রথমার্ধে প্রায় ১১,৭৫৪ বিলিয়ন টাকা এবং দ্বিতীয়ার্ধে প্রায় ৯,৬০৭ বিলিয়ন টাকা। এর পাশাপাশি, লেনদেনের সংখ্যাও এর গুরুত্ব প্রমাণ করে—বছরজুড়ে প্রায় ২০ মিলিয়ন (বা ২ কোটি) চেক এই সিস্টেমের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
এর থেকে বোঝা যায় যে, উচ্চ মূল্যের প্রাতিষ্ঠানিক এবং ব্যবসায়িক লেনদেনের ক্ষেত্রে চেকের মাধ্যমে পাওয়া নির্ভরযোগ্যতা এবং ডকুমেন্টেশনের গুরুত্ব আর্থিক জগতে এখনও অনেক বেশি।
৬. ভবিষ্যতের ভিত্তি: নীতি নির্ধারণের জন্য ২০২৪ ছিল একটি যুগান্তকারী বছর
ব্যবহারকারীর আচরণের পাশাপাশি ২০২৪ সালে ডিজিটাল পেমেন্টের ভিত্তি মজবুত করার জন্য বেশ কিছু যুগান্তকারী নীতিগত পরিবর্তন আনা হয়েছে।
২০২৪ সালে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো বিচ্ছিন্ন পদক্ষেপের পরিবর্তে একটি সমন্বিত কৌশল গ্রহণ করেছে, যার লক্ষ্য ছিল পেমেন্ট অ্যাক্টের মাধ্যমে লেনদেনের মৌলিক নিয়ম পুনর্গঠন করা, ‘টাকা-পে’-এর মাধ্যমে দেশের আর্থিক সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করা এবং ‘ক্যাশলেস বাংলাদেশ’ উদ্যোগের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে ডিজিটাল পেমেন্টের ব্যবহার বৃদ্ধি করা। এই সমন্বিত উদ্যোগগুলো একটি নিরাপদ, দক্ষ এবং উদ্ভাবনী ফিনটেক ইকোসিস্টেম গড়ে তোলার ভিত্তি স্থাপন করেছে।
এই সময়ের প্রধান উদ্যোগগুলো নিচে বিশ্লেষণ করা হলো:
• পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেম অ্যাক্ট, ২০২৪: এই আইনটি দেশের পেমেন্ট ব্যবস্থার জন্য একটি আধুনিক ও শক্তিশালী আইনি ভিত্তি স্থাপন করেছে। এর প্রধান বিধানগুলোর মধ্যে রয়েছে ইলেকট্রনিক মুদ্রা ইস্যু করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন বাধ্যতামূলক করা এবং অননুমোদিত আর্থিক কার্যক্রমের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা। এই আইনের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব হবে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, গ্রাহক সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং অবৈধ আর্থিক লেনদেন প্রতিরোধ করা।
• টাকা-পে (TakaPay): এটি দেশের প্রথম অভ্যন্তরীণ কার্ড স্কিম, যা একটি যুগান্তকারী কৌশলগত পদক্ষেপ। TakaPay-এর প্রধান লক্ষ্য হলো ভিসা বা মাস্টারকার্ডের মতো আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভরতা কমানো এবং মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণ করা। এটি স্থানীয় লেনদেনের খরচ কমাবে এবং দেশের আর্থিক সার্বভৌমত্বকে শক্তিশালী করবে।
• ক্যাশলেস বাংলাদেশ উদ্যোগ: এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো ডিজিটাল লেনদেনের সুবিধা বৃদ্ধি করে নগদ টাকার ব্যবহার কমানো, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ানো এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করা। এই উদ্যোগের অধীনে ‘বাংলা QR’ কোডের ব্যাপক প্রসার একটি বড় সাফল্য। ২০২৪ সালে বাংলা QR-এর মাধ্যমে লেনদেনের সংখ্যা ১০৪% এবং মূল্য ৬৯% বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল এবং ডিজিটাল পশুর হাটের মতো স্থানে এর সফল ব্যবহার প্রমাণ করে যে সাধারণ মানুষ এবং ব্যবসায়ীরা ডিজিটাল পেমেন্টের দিকে ঝুঁকছে।
• নিয়ন্ত্রক তত্ত্বাবধান এবং উদ্ভাবন: বাংলাদেশ ব্যাংক পেমেন্ট সিস্টেমের ওপর নজরদারি বাড়াতে একটি বিশেষায়িত ‘পেমেন্ট সিস্টেমস ওভারসাইট ডিভিশন’ প্রতিষ্ঠা করেছে। পাশাপাশি, ফিনটেক উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করতে রেগুলেটরি ফিনটেক ফ্যাসিলিটেশন অফিস (RFFO) স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া, SA-ORMF (Self-Assessment and Operational Risk Management Framework) ফ্রেমওয়ার্ক বাস্তবায়নের মাধ্যমে পেমেন্ট প্ল্যাটফর্মগুলোর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে।
এই সমন্বিত উদ্যোগগুলো বাংলাদেশের পেমেন্ট ইকোসিস্টেমকে একটি নতুন যুগে প্রবেশের জন্য প্রস্তুত করছে। তবে এর পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করে সামনে এগোতে হবে।
২০২৪ সালের প্রধান কৌশলগত পর্যবেক্ষণ
২০২৪ সাল বাংলাদেশের পেমেন্ট ইকোসিস্টেমের জন্য একটি রূপান্তরের বছর হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে, যেখানে একদিকে ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার ঘটেছে, অন্যদিকে প্রচলিত পদ্ধতির প্রভাবও বজায় ছিল। এই বিশ্লেষণ থেকে প্রাপ্ত তথ্যগুলো দেশের ডিজিটাল আর্থিক ভবিষ্যতের জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অগ্রাধিকার নির্দেশ করে।
• ডিজিটাল বনাম নন-ডিজিটাল বিভাজন: লেনদেনের সংখ্যায় ডিজিটাল মাধ্যম এগিয়ে থাকলেও মূল্যের দিক থেকে নন-ডিজিটাল চ্যানেলগুলো এখনও প্রভাবশালী। এই “ডিজিটাল অ্যাডাপশন গ্যাপ”-এর মূল কারণ হলো উচ্চ-মূল্যের কর্পোরেট, প্রাতিষ্ঠানিক এবং সরকারি লেনদেন ডিজিটালাইজড না হওয়া। এই বিভাজন দূর করা একটি ক্যাশলেস অর্থনীতি অর্জনের পথে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
• MFS-এ ক্যাশ-আউট নির্ভরতা: মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (MFS) আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনলেও এর মাধ্যমে একটি নগদ-ভিত্তিক আচরণ উৎসাহিত হচ্ছে, যেখানে লেনদেনের একটি বড় অংশ (৩২%) ক্যাশ-আউটের ওপর নির্ভরশীল। এটি একটি সম্পূর্ণ ডিজিটাল লেনদেন চক্র (end-to-end digital loop) তৈরির পথে প্রধান বাধা।
• নিয়ন্ত্রক উদ্যোগের প্রভাব: পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেম অ্যাক্ট, ২০২৪, টাকা-পে কার্ড স্কিম এবং ক্যাশলেস বাংলাদেশ উদ্যোগের মতো পদক্ষেপগুলো একটি শক্তিশালী, নিরাপদ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল ভবিষ্যতের ভিত্তি স্থাপন করেছে। এই উদ্যোগগুলোর সফল বাস্তবায়ন দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করবে।
সুপারিশ: বিনিয়োগকারী, নীতিনির্ধারক এবং ফিনটেক উদ্যোক্তাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরবর্তী পদক্ষেপ হবে একটি সমন্বিত কৌশল গ্রহণ করা। নীতিনির্ধারকদের অবশ্যই উচ্চ-মূল্যের সরকারি এবং কর্পোরেট পেমেন্ট ডিজিটালাইজড করার জন্য আইনগত বাধ্যবাধকতা তৈরি করতে হবে। ফিনটেকগুলোর জন্য কৌশলগত অপরিহার্যতা হলো এমন আকর্ষণীয় ব্যবহার-ক্ষেত্র তৈরি করা যা MFS ক্যাশ-আউটকে নিরুৎসাহিত করে এবং একটি শক্তিশালী ডিজিটাল মার্চেন্ট ইকোসিস্টেম গড়ে তোলে। ২০২৫ সালে এই অগ্রাধিকারগুলোর সফল বাস্তবায়নই নির্ধারণ করবে বাংলাদেশ তার ডিজিটাল বিভাজন দূর করতে পারবে, নাকি নগদ-ভিত্তিক অর্থনীতি তার পূর্ণ সম্ভাবনাকে বাধাগ্রস্ত করতে থাকবে।
উপসংহার
২০২৪ সালের ডেটা একটি দ্বিধাবিভক্ত আর্থিক চিত্র তুলে ধরেছে: একদিকে বড় অংকের ব্যাংক-টু-ব্যাংক স্থানান্তরের জন্য ডিজিটাল সিস্টেমের (IBFT) উপর নতুন করে আস্থা তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে দৈনন্দিন তারল্য এবং চূড়ান্ত লেনদেনের জন্য নগদ টাকার (MFS ক্যাশ-আউট, চেক) উপর গভীর নির্ভরতা এখনও বিদ্যমান। বাংলাদেশ ব্যাংক যখন ‘টাকা-পে’ এবং ‘বাংলা কিউআর’-এর মতো শক্তিশালী নতুন ডিজিটাল হাইওয়ে তৈরি করছে, তখন প্রশ্ন হলো, ২০২৫, ২০২৬ সাল কি সেই বছর হবে যখন আমরা আমাদের গভীরে প্রোথিত নগদ টাকার অভ্যাসে একটি বড় পরিবর্তন দেখতে পাবো?
মন্তব্য করুন