হাবলু দ্যা গ্রেট নামে পরিচিত কিংবা হাবলু তৈরি কারী সেই বিখ্যাত ব্যক্তিটির কথা কে না জানে? সেই বিখ্যাত এবং প্রতিভাবান ব্যক্তিটি হলেন বাংলাদেশী প্রোগ্রামার ” ঝংকার মাহবুব।” বিখ্যাত এই হাবলু স্বপ্ন দেখেন আরো হাবলু তৈরি করার, এমন হাবলু তৈরি করবেন যারা দেশ ও জাতির উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
সোজাসাপটা কথায় প্রোগ্রামিং এর কঠিন বিষয়, কোডিং এর শর্টকাট কিংবা মোহনীয়ভাবে উপস্থাপনের জন্য তার সুখ্যাতি চারিদিকে। ঝংকার মাহবুবের পরিচয় সহ সবকিছু নিয়ে আলোচনা হবে এই লেখায়।
Table of Contents
ঝংকার মাহবুব
প্রোগ্রামার “ঝংকার মাহবুব” এর জীবন সম্পর্কে অনেকেই জানি, জানতে আগ্রহী আরও অনেকেই। প্রায় সবাই জানে ঝংকার শূন্য থেকে কিভাবে টপ লিস্টে উঠে আসে এবং তার স্ট্রাগল সম্পর্কে আগ্রহের কমতি নেই । প্রখ্যাত প্রোগ্রামার ঝংকার মাহবুবের ডাকনাম ঝংকার, সে জন্মগ্রহণ করে ১০ সেপ্টেম্বর, বাংলাদেশের কোন এক মফস্বলে তার জন্ম হওয়া সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রে অনেক খ্যাতিলাভ করে প্রোগ্রামার হিসেবে।
ঝংকারের ছোটবেলা
ঝংকার মাহবুবের ছোটবেলা কাটে গ্রাম্য পরিবেশে অর্থাৎ বাংলাদেশের কোন এক মফস্বলে। রোজ সকালে মক্তব, মক্তব শেষ করে বাড়িতে এসে ভাত খেয়ে দুধের জগ নিয়ে বিক্রি, সেই বিক্রির টাকা নিয়ে বাসায় ফিরতো। আর বিকালে টিচারের কাছে পড়া শেষ করে গরুর ঘাস কেটে সে ঘাস ধুয়ে গরুকে খাওয়ানো, তারপর মাগরিব এর নামাজ পড়ে সন্ধ্যায় পড়াশোনা করতে বসা। আর সেজন্য ছোটবেলার খেলাধুলা আর তার হয়নি। যদিও কখনো কখনো অবসরে খেলতে যেতো, কিন্তু খেলায় এমন অনিয়মিত মানুষ কে কেউই খেলায় নিতে চাইতোনা, আর যদিও খেলায় নিতো তখন হয়তো তার বোন এসে তাকে ডেকে নিয়ে যেতো। বাড়ির সামনের বিভিন্ন শাক-তরকারী, নারিকেল বিক্রি করতে যেতো, এসব বিক্রি করার সময় বাস্তবজীবনের ট্রিকস ছিলো, আর তা হলো দিনের বেলায় দাম ঠিক রেখে বিক্রি করলেও সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে দাম কমেও বিক্রি করতে হয় ।
এইচএসসির সেই দুঃসময়
আজকালকার যুগের মত সে যুগেও মানুষ এসএসসি পরীক্ষায় অনেকেই স্টার মার্ক্স পেতো। কিন্তু ঝংকারের ব্যাপারটা ছিলো ভিন্ন, সে তার এসএসসি পরীক্ষায় ফার্স্ট ডিভিশনে এক বিষয়ে লেটার পেয়েছিলো। যা তার মন মত হয়নি। রেজাল্ট নিয়ে মন খারাপ করে বসে না থেকে চেষ্টা করছিলো কোথায় ভর্তি হবে। নটরডেম কলেজ, ঢাকা কলেজ এবং সিটি কলেজের মত নামকরা কলেজ গুলোতে ভর্তির ইচ্ছে থাকলেও, এই কলেজ গুলোতে পরীক্ষা দূরে থাক ফর্ম ও তোলা যাবেনা।
ঝংকারের বোনের এক পরিচিত আপুর কাছে কুমিল্লার এক কলেজের গল্প শুনেছিলো কিন্তু সে কলেজ কোথায় অথবা কিভাবে যায় তার কিছুই ঝংকার জানেনা। না জানা স্বত্ত্বেও মানুষকে জিজ্ঞেস করে করে কুমিল্লায় পৌঁছায়, ট্রাফিক পুলিশ থেকে শুনে নেয় গৌরিপুর সম্পর্কে, যেখানে এমন একটা কলেজ আছে, তবে বর্তমানে ওই যায়গায় বন্যা হওয়ার কারণে যাওয়ার উপায় নাই।
এত কষ্টের পর যখন পৌঁছলো জুরানপুর কলেজে তখন ঘটে আরেক ঘটনা। ফর্ম তুলতে গিয়ে শুনে কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে নিবেনা আর্টস বা কমার্স থেকে নিবে। শেষে অনেক কষ্টে ফর্ম তুলতে পারলো কিন্তু তার আগে ইন্টার্ভিউ এর সম্মুখীন হতে হয় এরপর শর্ত জুড়ে দেওয়া হলো এক্সাম দিয়ে টিকলে তারপর সায়েন্স থেকে ফর্ম তুলতে দিবে। অবশেষে ভাগ্য তার সহায় হলো সে ফর্ম তুলে ভর্তি হতে পেরেছে।
ঝংকারদের সেই ব্যাচে শেষ থেকে ২য় সে। আর এই রেজাল্টের শাস্তি স্বরূপ ঝংকার আনসোশ্যাল হয়ে আড্ডা মাস্তির পরিমাণ কমিয়ে পড়াতে মন দেয়। ফ্রি সময়ে মজা না করে পড়ায় মন দিতো। আর ফলস্বরূপ ফার্স্ট ইয়ার, সেকেন্ড ইয়ার এমন কি টেস্ট পরীক্ষায় ও ফার্স্ট হয়। আর তখন ঝংকার এতই ভালো করে যে ফিজিক্সেই ৭৫ এর মধ্যে ৭৪ পায়। যে স্যারের মাধ্যমে কলেজের ফর্ম তোলার আশার মুখ দেখে, সেই শাহ আলম স্যারই তাকে টিউশনির জোগাড় করে দেয়। পুরো ইন্টারমিডিয়েটে বাসা থেকে ৩ হাজারের মত টাকা লাগে মাত্র।
কষ্টকর কোচিং কাল
ঝংকার মাহবুব কুড়িলে তার বন্ধুর বাসায় থাকতো, বাসায় বলতে একে মেস বলা চলে। ৬ রুমের ৫টাতে বিভিন্ন ধরণের পরিবার থাকতো আর একটাতে ঝংকার আর তার বন্ধু থাকতো। থাকার ব্যবস্থা যখন একটা ব্যবস্থা হয়েছে তখন অন্নসহ বাকিসব কিছুর ব্যবস্থা করা লাগে। আর সে খোঁজেই তার দিন যেতো। ছাত্র হিসেবে টাকার টানাপোড়ন থাকবেই, সেটা স্বাভাবিক ব্যাপার হয়তো।
সে তার প্রতিদিনের রুটিন কন্টিনিউ করার চেষ্টা করে যেতো, যেমন সকালের কোচিং ক্লাসে চলে যেতো যেভাবেই হোক, এভাবেই সব কিছু রুটিন মত করার চেষ্টা করতো এতটা সমস্যা আর কষ্টের মধ্যে থেকেও। ঝংকারের যায়গায় অন্য কেউ হলে ভাগ্যকে দোষারোপ করে খারাপ পথে চলে যেতো, লক্ষ্য হিসেবে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতো না। ঝংকারের এমনও দিন গেছে যে, তার কাছে খাবারের টাকা অথবা কোন ধরণের টাকা থাকতোনা, তখন ও সে কোচিং এ চলে যেতো। বাসে উঠে কন্ডাক্টর টাকা চাইলে মানিব্যাগ ফেলে আসার ভান করতো, আর কন্ডাক্টর এর দয়া হলে গন্তব্য পর্যন্ত যেতে দিতো, আর দয়া না হলে নামিয়ে দিতো।
আহারের ব্যবস্থা করতে উঠে পড়ে লাগতো, এরপর ও বাড়িতে যাওয়ার কথা ভাবতোনা, আকাশ সমান স্বপ্ন নিয়ে সে এখানে পড়ে ছিলো। কারো থেকে টাকা ধার পেলে খাবারের ব্যবস্থা হতো, তার খাবার যে উন্নতমানের, তাও না, এক টাকা দামের সিঙ্গারা আর ফ্রিতে পানি খেয়েও দিন কাটাতো। আবার ফ্রি পানির জন্যও অনেক দূর যেতে হতো, যেখানে সিঙ্গারা পেতো সেখানে ফ্রিতে পানি পেতোনা যার জন্য আরেক যায়গায় থেকে পানি সংগ্রহ করতো।
কোচিং এর টাকা যে ঠিকঠাক ব্যবস্থা করতে পারতো ব্যাপারটা তেমনও না। কোচিং এর পূর্ণ ফি দিতে না পেরে কিছু টাকা বুয়েটে চান্স পাওয়ার পর টিউশনি করিয়ে ১ বছর পর পরিশোধ করেন।
ভর্তি পরীক্ষার পরের সময়টা
ঝংকারের বয়সের অন্যান্য ছেলেরা যখন জীবন কে উপভোগ করছিলো, আধুনিক জগতে পা রেখে টাকা খরচ করতো, নিজের পোষাক থেকে চুল পর্যন্ত সব দিক দিয়েই স্টাইল প্রকাশ করতে থাকে। ঠিক তখনো ঝংকারের টাকার চিন্তা হতো। কিভাবে একটু বেশি আয় করা যায়। এই চিন্তার জন্য গ্রাম ছেড়ে শহরে এসে টিউশনি শুরু করে। আগে যেখানে থাকতো ঝংকার সেখান থেকেই কোন এক কারণে থাকার যায়গার পরিবর্তন করে। আর এই পরিবর্তন করতে গিয়েই সমস্যায় পড়ে, চেনা মানুষেরা মুখ ফিরিয়ে নেয়। শেষে একদম অচেনা একজন তাকে বিশ্বাস করে। কাজিপাড়ায় কাজির মেসে সেই লোকের সাথে ডাবলিং থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। শুধু থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েই দূরে যায়নি, খাওয়াদাওয়ার ও ব্যবস্থা করে দেয়। এই যুগে থেকেও সেই লোক ঝংকারের সব কথা বিশ্বাস করে নেয়। এরই মাঝে পকেটের বাকি টাকাও শেষ শেষ অবস্থা। গ্রামের বাড়ি যাবে নাকি এ শহরে থাকবে উদ্বাস্তু হয়ে এসব ভাবতে ভাবতে একটা আইডিয়া মাথায় আসে আর এতেই সে চলে যায় টঙ্গীতে।
টঙ্গীতে এক খালু থাকেন, টঙ্গীর নোয়াখালী পল্লিতে সেই খালুর এক দোকান আছে। সে দোকান ছিলো কন্সট্রাকশন জিনিসের। আর দোকানে কাজ নিয়ে এসব কন্সট্রাকশন জিনিসই বিক্রি করতো ঝংকার। তারকাটা বিক্রির সময়ে হাতে খোঁচা লাগতো, আর সে খোঁচা লাগা যায়গায় পানি লাগলে আবার অনেক জ্বালাপোড়া করতো, আলকাতরা হাতে লাগলে সেটা ধুয়ে খাবার খেতেও গেলেও গন্ধ লাগতো তারপর আবার চটের বস্তা নিয়ে কাজ করতে গেলে পশম পুরো শরীরে ছড়িয়ে যেতো। ছুটির দিন হিসেবে শুক্রবারে বড় কাস্টমাররা আসতো দোকানে। তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসের লিস্টের সব এ দোকানে না থাকলে আবার ভিন্ন যায়গা থেকেও এনে দিতে হতো। এত কষ্ট করে, খাওয়া নিয়ে কিছু বলতেই হয়, এত কাজের ভিড়ে খাওয়ার খবর থাকেনা, এসব বড় কাস্টমারের জন্য নাশতা পানি আনা হলে দুপুরের খাবার হিসেবে এসবই খাওয়া হতো আর নয়তো এক সাথে সন্ধ্যায় খেতো।
দোকানের মালিক সেই খালু মানুষকে গর্বের সঙ্গে জানাতো ঝংকার বুয়েটে পড়ে। মানুষ হয়তো বিশ্বাস করতোনা, কেমন করে একবার তাকিয়ে আবার নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে যেতো অথবা কেউ কেউ উৎসাহ নিয়ে বুয়েটের ভিসির নাম জিজ্ঞেস করতো, আবার কেউবা কেউ রীতি অনুসারে বলে দিতো, বাড়িওয়ালার চাচাতো ভাইয়ের মেয়ের ননাসের ছেলে বুয়েটে পড়ে।
বুয়েটে ঝংকার মাহবুব
বুয়েটে পড়তে এসেছে, পোষাকের তালিকা দিলে ২টা জিন্স আর ৩ বা ৪টা শার্টের কথা উল্লেখ করতে হয়। এর মাঝে বুয়েট কর্তৃপক্ষ থেকেও একটা প্যান্ট আর শার্ট পায়। হঠাৎ একদিন তার বেডের নিচে একটা সুটকেস আবিষ্কার করে। অনেক অনুসন্ধানে জানা যায় এটা এক বড় ভাইয়ের, যিনি আগে এখানে থাকতো। এখন বদলি হয়ে চট্টগ্রাম চলে গেছে। যেহেতু বড় ভাই এখানে আর আসবেনা সেহেতু একদিন ঝংকার আর তার ক্লাসমেট সুটকেস টা খুলে দেখে। যা পায় তার মধ্যে ছিলো কিছু শার্ট, প্যান্ট এবং পুরনো দিনের গানের ক্যাসেট। এরপর আরো কিছুদিন চলে যায়, হঠাৎ একদিন ঝংকার কাপড়ের অভাব করলে সুটকেস থেকে নিয়ে পরা শুরু করে দেয়। যেহেতু ঝংকার ছাত্র এখনো, সেহেতু শার্টের প্রয়োজন তার আছেই। বাড়ি থেকে আনা ক’টা শার্ট দিয়ে তার ছাত্রজীবন চলে যাবেনা, আর অন্যদিকে জামা কাপড় ময়লা হলেও কাপড়ের অভাব লেগে যায়। ঝংকার যখন শার্ট পরা শুরু করলো তখন তাকে যেই দেখে সেই হাসা শুরু করে,ঠাট্টা করে এত বড় শার্ট পরার কারণে। লোকের কথা কানে না নিয়ে সে তার নিজের কাজ নিজেই করে।
ঝংকার সেই লোকটার জামাকাপড় আর জুতা পরে নটরডেমিয়ান, মেকানিক্যাল সেজে টিউশনি করাতো। নটরডেমের স্টুডেন্ট কেও নটরডেমিয়ান সেজে এবং সব ভুয়া তথ্য দিয়ে পড়াতো, কারণ এখনো প্রায় গার্ডিয়ান নটরডেমিয়ান ছাড়া অন্যদের ছাত্রই মনে করেনা। এদেরকে পড়ানোর মাঝে ভালো কোন টিউশনি পেলে তখন এদেরকে ছেড়ে দেয়, কারণ কখন নিজের খোলস সবার সামনে প্রকাশ হয়ে যায় তার বিশ্বাস নাই।
প্রেজেন্টেশন এর সময়ে সে তার প্রয়োজনীয় জিনিস গুলার অভাব বোধ করে। তার কোন ফরমাল ড্রেস নাই, জুতা নাই। এসবের প্রয়োজন হলে বন্ধু শাওনের থেকে কিছু টাকা নিয়ে ১৫০ টাকা দামের রেডিমেড প্যান্ট কিনে এবং শার্ট আর জুতা অন্যদের থেকে ব্যবস্থা করে প্রেজেন্টেশন দিতে যায়। বেল্টের জন্য সমস্যায় পড়ে যায়, শেষে উপায় না পেয়ে, বেল্টের ব্যবস্থা না করতে পেরে শার্ট বড় করে পরে। যাতে বেল্টের অনুপস্থিতি কেউ না বুঝে।
এক নজরে ঝংকার মাহবুব:-
- আসল নাম : ঝংকার মাহবুব
- ডাকনাম : ঝংকার
- জন্ম তারিখ : ১০ সেপ্টেম্বর
- জন্ম স্থান : বাংলাদেশ।
- শিক্ষা : কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার।
- শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : জুরানপুর কলেজ (কুমিল্লা), বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি।
- স্ত্রী’র নাম : কারিনা ইসলাম, ভিকারুন্নেসা নুন স্কুলের ছাত্রী। বর্তমানে কম্পিউটার বিজ্ঞানে মাস্টার্স করেন “জর্জিয়া টেক এ।
- স্ত্রীর ডাকনাম : বাঁধন
- বিয়ের তারিখ : মে ১৫, ২০১৫
- পুরষ্কার : মাস্টার্স অব সাফল্য, নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি, ফল ২০১২, নর্থ ডাকোটা, ইউএসএ, চ্যাম্পিয়ন, প্রজেক্ট ডি ইয়ুথ, গ্রামীনফোন ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর প্রতিযোগিতা ২০০৭, বাংলাদেশ।
- পেশা : শিক্ষক, (ওয়েব ডেভেলপমেন্ট শিক্ষা দেন।) সিনিয়র ওয়েব ডেভেলপার, লেখক((বাংলাদেশের বেস্টসেলার), উদ্যোক্তা, বিপণন উৎসাহী এবং একজন ইউটিউবার।
- প্রধান পেশা (১) : ওয়েব ডেভেলপার এবং পাইথন ট্রেইনার ( কোডিনিজম ইনকর্পোরেটেড)
- প্রধান পেশা (২) : লেখক ( বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি বিক্রিত বইয়ের লেখক ( প্রোগ্রামিং এবং স্বনির্ভর বই)
- প্রধান পেশা (৩) : ইউটিউব কন্টেন্ট ক্রিয়েটর।
- প্রধান পেশা (৪) : সফটওয়্যার ডেভেলপার।
- পেশাগত অভিজ্ঞতা : সিনিয়র ওয়েব ডেভেলপার, নিলসেন, শিকাগো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ৫+বছরের ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এর অভিজ্ঞতা।
- ওয়েব ডেভেলপার ইন্টার্ন : ইমেজ ট্রেন্ড।
- লিড ডেভেলপার : পোলারিস ইন্ডাস্ট্রিজ।
- দক্ষতা : জাভাস্ক্রিপ্ট, রেডাক্স, Angular6, বুটস্ট্র্যাপ, ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং ডিজাইন।
- প্রিয় : কৌণিক, রেডাক্স কাহিনী, graphql, অ্যাপেলো, অ্যান্ড্রয়েড এসসিএসএস ইত্যাদি।
- পরিচিত : dc.js, ক্রস -ফিল্টার জেএস, chrome এক্সটেনশন, অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ পাইথন এবং এসকিউএল ইত্যাদি।
- ইন্টার্নশিপ : বিটিডি ম্যানুফ্যাকচারিং ইনকর্পোরেটেড।
- বিজনেস কনসালটেন্ট : সুইসকন্টাক্ট – ক্যাটালিস্ট।
- হোম টাউন : ঢাকা, বাংলাদেশ।
- বর্তমান ঠিকানা : সানফ্রানসিসকো, ক্যালিফোর্নিয়া।
বাংলাদেশে অবস্থান এর সময়ের পেশাঃ-
বুয়েটে লেভেল ২টার্মে থাকা অবস্থায় ঝংকারের একটা বিষয় ছিলো সলিড মেকানিক। ক্লাস টেস্টে গণহারে ফেইলের রেকর্ড থাকে। পরীক্ষার আগের রাতে প্রিপারেশন এর সময় ঝংকার মাহবুব আর তার বন্ধু শাকিল সলিড মেকানিক এর পুরা বই এর ম্যাথ সলভ করে বিক্রির চিন্তা করে, মানুষ তাদের বই ফটোকপি করে পড়ে নিতে পারে; আর সেজন্য ভিন্ন পন্থা স্বরূপ কালো কাগজ এবং রঙ্গিন কাগজে প্রিন্ট করে বাধাই করে বিক্রি শুরু করে ১৫০ টাকা দামে। তাদের খরচ হতো ৬৮ টাকা আর প্রতিটা বইয়ের বিক্রয়মূল্য ছিলো ১৫০ টাকা। চুয়েট, রুয়েট সহ বিভিন্ন ভার্সিটিতে সে বইয়ের এজেন্ট ছিলো, যারা ঝংকারদের থেকে ১৫০ টাকা করে নিয়ে ২০ টাকা লাভে ১৭০ টাকা বিক্রি করতো। এরপর ২০০৮ সালে ঝংকার ও শাকিল বুয়েট থেকে পাশ করে বের হলে ইউসুফ বুকস্টল এ ব্যবসা বিক্রি করে দেয়।
ঝংকার দুইটা অথবা তারচেয়েও বেশি টিউশনি করাতো। আর ভর্তি পরীক্ষার সময়ে ওমেকা, ইউসিসি সহ বিভিন্ন কোচিংসেন্টার গুলোতেও ক্লাস নিতো। ঝংকার ছিলো আইপির ৬ষ্ঠ ব্যাচের ছাত্র, সে ফার্স্ট থেকে ৬ ব্যাচেই জিপিএ-৪ এর মধ্যে জিপিএ-৪ পেয়েই ছাড়তো। ২০০৭ সালে গ্রামীনফোনের একটা কম্পিটিশন হয়, সেই নাম করা কম্পিটিশনে ঝংকারদের টিম তাদের বিপরীত টিম কে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়, আর সে খবর দেশের নিউজপেপার এবং টিভিতেও সম্প্রচার হয়। সবার পরিচিত রুবাবাদ্দৌলার সাথে মিটিং ও করেছিলো এমন আরো অনেক কৃতিত্বের সাক্ষর রাখে ঝংকার মাহবুব তার জীবনে।
ঝংকার আর শাকিল বিজনেসের ইচ্ছে পোষণ করলে, কনসালটেন্সি ফার্ম দেয়, আর তার নাম রাখে ECLECTIC. ইনভেস্ট ছাড়াই কাজ পেয়ে যায় এবং পরীক্ষার গ্যাপে চট্টগ্রাম গিয়ে প্রেজেন্টেশন ও দিয়ে আসে। আর শেষে রেজাল্ট খারাপ হয়ে যায়। ফার্স্ট থেকে সেকেন্ড হয়ে যায়। বুয়েটের এক্সামে যারা তৃতীয় এবং চতুর্থ হয়েছে তারাও বুয়েটের টিচার হিসেবে জব নিয়েছে। কিন্তু ঝংকার মাহবুব তার কিছুই না করে এক ভিন্ন পথে হাঁটে।
ঝংকারের দুর্বিষহ চাকরির জীবন
ঝংকার ২০১১ এর শেষ দিকে স্ট্রাটা ডিসিশন টেকনোলোজিতে চাকরি পায়। যেহেতু এটা প্রোগ্রামিং এর কাজ, সেহেতু প্রফেশনাল লাইফে প্রোগ্রামিং এর কাজ নেওয়ার মজা সে ভালো মতই বুঝছিলো। জব এর বয়স যখন মাত্র ৩ মাস তখন ঝংকারের বস তাকে বলে ইম্প্রুভ করতে হবে তাকে। এ কথার উত্তর স্বরূপ ঝংকার সব ছেড়ে ১৪-১৬ ঘণ্টা অফিসেই সময় দিতো। এতটা সময় দেওয়ার পর ও প্রোগ্রামিং এ তার ভুলের সংখ্যা কমছিলো না। এত ঘন্টা সময় দিয়েও একই ভুল বারবার করে। ১০ লাইন লিখলে ৪ থেকে ৫টা ভুল থাকেই। এরপরের মাসে কোম্পানি যখন ওয়ার্ক পারমিটের জন্য এপ্লাই করে তখন ঝংকার আশ্বস্ত হয় এই ভেবে যে, তাকে তো ফায়ার করবেনা। নয়তো কেন তারা এতটাকা খরচ করতেছে ওয়ার্ক পারমিটের জন্য। তার ও একমাস পর একদিন ঝংকারকে মিটিং এ ডাকে। মিটিং এ গিয়ে ঝংকার শক হয়ে যায়। কারণ এ মিটিং ডেকেছে ঝংকারকে ফায়ার করার জন্যই। বস ঠাণ্ডা এবং শিতল গলায় বললো ”Take all your personal belongings. I will walk you to the door.”
কি করার ছিলো, কি করতো বা কি বলতো সব কিছুর আগেই ১০ মিনিটের মাঝেই সব শেষ হয়ে যায়। ৮৩তলা এওএন সেন্টার নামক অফিস থেকে সোজা রাস্তায় নেমে পড়ে, পরাজিত সৈনিক যেমন হয়। আমেরিকা সরকারের নিয়ম অনুযায়ী ০২ মাসের মধ্যে চাকরি না পেলে বাংলাদেশে ব্যাক করতে হবে । আর এ বিপদের কথা বাবামাকে জানানোর সাহস তার নাই। তাই না জানিয়েই নিজের মত চেষ্টা করতে থাকে।
ঝংকার তার জীবনে ভেঙ্গে পড়তে পড়তে এ অবস্থানে এসেছে, ফলস্বরূপ সে বিপদের এবং কষ্টের তোয়াক্কা করেনা। কষ্ট পেলে, বিপদে পড়লে অথবা ভেঙ্গে পড়ার অবস্থা হলেও সুন্দর করে এসব থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করবে এবং নিজের প্রতিদিনের রুটিন চালিয়ে যাবে। যেখানে অন্য কেউ হলে ভেঙ্গে পড়ে সব ছেড়ে পালানোর অবস্থা সেখানে সে নিজ থেকেই অনেক কিছুতে ঢুকে যায়। সুতরাং সিভি আবার নতুন করে সব যায়গায় পাঠাতে থাকে, পরিচিতদের বিরক্ত করতে থাকে বারবার করে। যখন এভাবে কাজ হচ্ছিলোনা তখন সিভিকে মডিফাই করে লিখলে তারপর থেকে ইন্টার্ভিউ তে তাকে কল করা শুরু করে।
১৫ দিন পর এক কোম্পানির একজনের আগ্রহ হয় ঝংকার সম্পর্কে, কিন্তু সে কোম্পানির ম্যানেজার অন্য যায়গায় থাকার কারণে ইন্টার্ভিউ তে ডাকছেনা ঝংকার কে। শুধু তারা সময় চাচ্ছিলো। শেষে ঝংকারের অতিরিক্ত জ্বালানোতে বিরক্ত হয়ে সেই লোকটা বলে Unless you are a rock star, we can not hire you over the phone. এটা বললেও ঝংকারের কাছে পরাজিত হয়ে তারা ফোনেই ইন্টার্ভিউ তে ডাকতে বাধ্য হয়। আর চমৎকার বিষয় হলো তারা চাকুরিও অফার করে। শেষের দিকে টানা অনেক ইন্টার্ভিউ থেকে কল আসে এমপিএস এ জব পেলে তার পরদিনই Nielsen এ ইন্টার্ভিউ ছিলো এরপর আরো একটাতে ইন্টার্ভিউ এর জন্য ডাকে। ২০১২ সালের মাঝামাঝি সময়ে Nielsen থেকে জব কনফার্ম করে। ঝংকার মাহবুবের জীবন থেকে শেষ হয় দুর্বিষহ এবং ভয়ানক ২৮ দিন।
নিজের ওয়েবসাইটঃ
ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে ট্রান্সফার হওয়ার পর থেকেই চাকরি খোঁজা শুরু করে ভালো ভাবে। কোন ইন্টার্ভিউ তে আর ডাকা হয়না তাকে। পরে Resume তে প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং কে চেইঞ্জ করে ব্যাচেলর ইন ইঞ্জিনিয়ারিং করে ওয়েব সাইট তৈরি করে। ওয়েব সাইটেও বিশেষ লাভ হয়না।
৪ বছরের অভিজ্ঞতা
কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারদের এত চাহিদা থাকার পর ও ছোট বা মাঝারি কোম্পানি গুলো ইন্টারন্যাশনালদের স্পন্সর করতে চায় না। আর এ সুযোগ নিয়ে ইন্ডিয়ান কনসালটেন্সি ফার্মগুলা অন্য কোম্পানির নামে জব সাইটে ফেইক জব পোস্ট করে । আর এসব দেখে ঝংকার মাহবুব ইলিউশান তৈরি করে স্টার্ট-আপ এর প্রজেক্ট গুলোকে কম্পিউটার সায়েন্সের কাজ হিসেবে দেখায়। তার পরিচিত বাংলাদেশি এক্সপেরিয়েন্স প্রাপ্ত একজনের প্রোফাইল থেকে কপি পেস্ট করে নিজের সামারিতে দেয়। আর তা অধিকমাত্রায় কাজে দেয় এবং সাথে সাথেই ইন্টার্ভিউ এর কল বেড়ে যায়।
এত কিছু করে ইন্টার্ভিউ তে কল আসলেও তাদের প্রশ্নের ঠিক জবাব না দিলে ইন্টার্ভিউতে কল এসেও লাভ কি হবে। Trip advisor এর ইন্টার্ভিউতে প্রশ্নের উত্তর না দিতে পারাতে ১ ঘন্টার ইন্টার্ভিউ ৫-৬মিনিটেই শেষ হয়ে যায়। লজ্জায়, দুঃখে এবং মন খারাপে একটা ভালো পথ খুঁজতে থাকে। কিভাবে এগোনো যাবে। তখনো কিন্তু ভেঙ্গে পড়ে বসে যায়নি ঝংকার। আর সবচেয়ে খারাপ লাগার সময় হলো আরেকটা কোম্পানির ইন্টার্ভিউতে ৫ রাউন্ডে দশটা থেকে চারটা পর্যন্ত হওয়ার কথা ছিলো। আর সেখানে তারা ২ টা প্রব্লেম সলভ করতে একঘণ্টা সময় দেয় আর সলভ করতে না পারাতে পাঁচ রাউন্ড দূরে থাক এক রাউন্ডেই সব শেষ।
ইন্টার্ভিউ তে যেসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যেতোনা সেসব প্রশ্ন মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ঘুরে গুগল থেকে সহ যেভাবে পারতো উত্তর বের করে তা লিখে রাখতো এবং শিখে নিতো। পরবর্তি ইন্টার্ভিউতে যাতে কাজে দেয়। প্রোগ্রামিং এর অনেক কিছু ও রুমের দেয়ালে আটকে রাখতো ঝংকার। তারপর ও ইন্টার্ভিউতে কিছু সময়ে পরই কর্তৃপক্ষ বুঝে নিতো আসলে ঝংকারের মধ্যে সেই বিষয়ের ক্লিয়ার জ্ঞান নাই। ২০১১ সালের শুরু থেকে মাইক্রোসফটে তিনবার, এমাজনে কয়েকবার এমন করে ছোট বড় অনেক কোম্পানিতে ইন্টার্ভিউ দেওয়া ছাড়া বিশেষ কোন সাকসেস ছিলোনা।
ছোটবড় কোম্পানি গুলো সাধারণত অন্য যায়গা থেকে মানুষ ডাকে না। এরা যেখানে আছে অর্থাৎ কোম্পানি যে শহরে আছে, সে শহরে অবস্থিত ইউনিভার্সিটির ক্যারিয়ার সেন্টার গুলোতে জব পোস্ট করে। সেজন্য ঝংকার বড় ইউনিভার্সিটিতে পড়ুয়া তার পরিচিত একজনের ইউজার আইডি দিয়ে এপ্লাই করে জব পায়। ইন্টার্ভিউ দেওয়ার আগে গ্লাসডোর এবং ক্যারিয়ারকাপের প্রশ্ন সব সময়ে পড়ে যেতো। আর বিভিন্ন যায়গায় ইন্টার্ভিউ দিতে গিয়ে দেখে প্রশ্নগুলো কমন পড়েছে।
নর্থ ডেকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স বাদ দিয়ে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়া শুরু করার পর অনেকের সাথে ঝংকার ও ইন্টার্ভিউ তে কল পায় আর সে বিকালের সময় নির্ধারণ করে। এতে করে যারা সকালে এক্সাম দিয়েছে তাদের থেকে প্রশ্ন পাওয়া যাবে। আর ঠিক তাই হলো কিছু প্রশ্ন কমন পড়ছে আর বাকি গুলো আন্দাজে ডিল মেরেছে শুধু। পরে সেকেন্ড রাউন্ডে উত্তীর্ণ হয়।
প্রোগ্রামিং এর ইন্টার্ভিউ এর সময়ে ফোনে উত্তর বলার সময় কোডও লিখা লাগে। আর তাকে এমন একটা কোড দেওয়া হয় সলভ করার জন্য। ইনপুটকে আউটপুট বের করতে হবে। যা ঝংকার জানতো না। অনেক চেষ্টা করেও আউটপুট বের করতে না পেরে জিজ্ঞেস করে আর প্রশ্ন আছে কিনা থাকলে ২য় টা জিজ্ঞেস করতে। কিন্তু তারা জানায় যে আর কোন প্রশ্নই নাই। এরপর ও একটা সুযোগ থাকে আর তা হলো ছাত্র হওয়ার কারণে অযুহাত স্বরূপ বলা হতো এক্সাম ছিলো পড়া ছিলো। এরকম করে আরেকবার ইন্টার্ভিউ এর চান্স চাইলে তারাও চান্স দিতো। কিন্তু ঘুরেফিরে একই কথা। কোন কাজে আসল না।
পূর্বের সকল ইন্টার্ভিউ তে আসা প্রশ্নগুলো সমাধান করে ঘরে ঝুলিয়ে রাখতো, সাদা বোর্ডে লিখে রাখতো এবং পরবর্তিতে সেগুলা পড়ে অন্য সব ইন্টার্ভিউ তে এটেন্ড করতো। আর তখন ইমেজট্রেন্ড থেকে ইন্টার্ভিউতে ডাকে, প্রথম ইন্টার্ভিউ খারাপ হলে ২য় বার আবার সুযোগ পায়। আর সেটাই কাজে লাগায়। ইন্টার্ভিউ দিতে যাবে কিন্তু কোন ট্রেন বাস অথবা এমন কিছুর উপায় না থাকায় গাড়ি নিয়ে ২৫০ মাইল পথ দূরে যাওয়ার সাহস করে। অনেক কষ্টে জিপিএস ধরে রেখে কোনরকম গাড়ি চালিয়ে গন্তব্যে পৌঁছায়। যাওয়ার আগে একটা নোট লিখে আসে, নোট টা ছিলো এমন যে ঝংকার যদি না ফিরে, তবে তার একাউন্টের টাকা গুলো যাতে তার পরিবারের কাছে পৌঁছে দেয়, ঠিক এতটাই ভয়ানক পথ ছিলো আর অবস্থা ছিলো ঝংকারের জীবনে।
ঝংকার ছাড়াও কয়েকজন ভারতীয় ইমেজট্রেন্ড এর অফিসে গিয়ে সরাসরি ইন্টার্ভিউ দিয়েছিলো। ঝংকারের কাজ ছিলো ইমেইল দেওয়া মিটিং সেট করা, হা হয়ে বসে থাকলেও মিটিং মিস দিতোনা। ড্রাইভিং করার সময়ে গান না শুনে প্রোগ্রামিং এর সেই সিডিগুলো রিভাইজ দিতো শুধুমাত্র আয়ত্বে আনতে। এরকম করে, শেষে নিজের অবস্থা এতটাই উপরে নিয়ে যায় যে, তাদের গ্রুপে ১০০% কাজ করে, তার চাইতেও বেশি ভালো হয়ে গেলো ঝংকার।
ইন্টার্নের সময় ঝংকারের গাড়ি ছিলোনা, আরেকজনের গাড়ি নিয়ে তার গন্তব্যে পৌঁছায়। যার বাসা ভাড়া করছিলো তার আরেকটা গাড়ি ছিলো তার গাড়ি ড্রাইভিং করে অফিসে যাওয়া আসার বিনিময়ে তাকে কিছু বিনিময় দিতো। শেষে গাড়িটা নষ্ট হলে না পেরে সাইকেল চালানো শুরু করে। সাইকেলে করেই গন্তব্যে পৌঁছায়। আর শেষে সেই সাইকেল ও একদিন রাস্তায় নষ্ট হয়ে বসে যায়। শেষে না পেরে ৫০ মিনিট হেঁটে অফিসে যেতো আবার ৫০ মিনিট হেঁটে বাসায় ফিরতো। আর শেষে ভাগ্য স্বরূপ ইন্টার্নের টাকা হাতে পেয়ে সে টাকায় একটা টয়োটা ক্যামরি কিনে নেয় ঝংকার।
অফিসে যাওয়া আসার এত্ত কষ্টের চেয়ে ও বেশি কষ্ট হতে লাগলো প্রফেশনাল ভাবে ওয়েব ডেভেলপ এর কাজ করা। ইন্টার্নের আগে অনেক কিছুর টিউটোরিয়াল দেখলেও কাজের ক্ষেত্রে যথেষ্ট জ্ঞান ছিলোনা। ফলস্বরূপ একটা কাজ কয়েকবার বুঝে নেওয়ার পর ও উল্টাপাল্টা করার অভ্যাস ছিলো। কোড এর ক্ষেত্রেও ভুল বর্তমান ছিলো। সকাল ৭টায় গিয়েও অন্য সবার মত কাজ করতে পারতোনা, একটা সমস্যা সলভ করতে করতেই দিন কেটে যেতো এমন অবস্থা ছিলো। ছুটির দিনেও অফিসে যেতো এবং একা একা অফিসে থাকতো ইন্টার্ন শেষের দিকে ঝংকার তাদেরকে বলছিলো তাকে ফুল টাইমের জন্য হায়ার করতে, কোন এক কারণে তারা নিষেধ করে দেয়, তাই সামার আসাতে সেখান থেকে ফিরে আসতে হয় নর্থ ডেকোটা ইউনিভার্সিটিতে।
সিএসসি তে যে কোর্স নিয়েছে ঝংকার মাহবুব সেগুলোর ক্লাসে কিছুই না বুঝে হা হয়ে বসে থাকা ছাড়া উপায় ছিলোনা। কোর্সের সমস্যা গুলা গুগল করে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেঘুরে সমাধান করতো। তার উপর আরো ২টা কোর্স এবং রিসার্চ তো আছেই। ঘুম কমিয়ে ৪ ঘণ্টায় এনেছে, আড্ডা,মাস্তি মজা ফেসবুক সব বন্ধ করে জীবনকে একদিকে বন্দি রাখার চেষ্টা করে আর তা হলো প্রোগ্রামিং জগতে। মিডটার্মে কোর্সে ভালো নাম্বার তুলতে পেরে ভাগ্যকে ধন্যবাদ দেয়, আর সিএসসি ডিপার্টমেন্ট এর হেড এর কাছে এডমিশন চাইলে সে জানায় এত তাড়াতাড়ি কিভাবে রেজাল্ট ও পাব্লিশ হয়নাই। শেষ পর্যন্ত ঝংকারের সমস্যা দেখে উপায় না পেয়ে আর দেরি না করে এডমিশন দেয়। Fargo এর একজন থেকে টাকা নিয়ে নিজের একাউন্টে তা শো করে অফিসিয়াল এডমিশন এর কাগজ বের করে।
এডোবি ইলাস্ট্রেটর ওয়ার্কশপে, ঝংকার কাজ চাইলে তাকে কাজ দেওয়া হয়না তবে সেখানে যারা কাজ শিখতে আসে তাদের ভলান্টিয়ার হিসেবে ঝংকার মাহবুব ছিলো। সেখানে তাকে জব না দিলেও ঝংকার যখন তাদের কাছে আসা মানুষদের কাজ শিখাতো, হেল্প করতো বা সমস্যা সমাধান করে দিতো। তখন সেখানের একজন ভারতীয় ভার্সিটি ছেড়ে চলে যাবে শুনে টিএলমিসি এর হেড ঝংকারকে রিকোয়েস্ট করে এখানের কাজের ব্যাপারে। সেমিস্টারের রিজেকশনকে পাশে রেখে আবারো ইন্টার্ভিউ তে আসে ঝংকার। মাসিক বেতন ৭০০+ডলার আর টিউশন ফি মাফ। আর এটা ছিলো ঝংকারের জীবনের সবচেয়ে খুশির সময়। ২০১০ সালের শেষ দিকে অফিসিয়ালি কাজ শুরু করে ঝংকার।
আমেরিকায় সামার ইন্টার্ন বলতে বুঝায় ক্যাম্পাসের বাইরে কোন কোম্পানিতে তিন মাসের জব করা। আর সামারে প্রায় সবার ফান্ডের টাকা শেষ হয়ে যায় এবং ক্লাস ও থাকেনা আর তাই সে সময়কে সবাই কাজে লাগায়। আর এতে প্রফেশনাল এক্সপেরিয়েন্সও হয়। আর ঝংকার একটা এনডিএসইউ তে আইএমই এ মাস্টার্স করতে আসে। ফেব্রুয়ারিতে ভার্সিটিতে একটা ফেয়ার হয়, আর সেটাতে খুব সিরিয়াসলি গেলেও কোন ইন্টার্ভিউ থেকে কল আসেনি। এপ্রিলের শুরুতে এক ফ্যাকালটির ইমেইল অনুসারে বিটিডি ম্যানুফ্যাকচারিং এ রেজুমি জমা দেওয়াতে মে মাসে একটা ইমেইল পায়, তাতে লেখা থাকে যে ঝংকার কে ইন্টার্নের জন্য সিলেক্ট করা হয় ২বার খবর দেওয়া হয় । কিন্তু ঝংকারের খবর না পেয়ে শেষবারের মত আবার খবর দেয়। আর আমেরিকান রুল অনুসারে ইন্টার্ন পেতে অবশ্যই দুই সেমিস্টারের পড়া কম্প্লিট থাকতে হবে, কিন্তু ঝংকার আসছে বছরের শুরুতে, এক সেমিস্টারের পড়াই শেষ হয়নি। মে মাসের দিকে এক সেমিস্টারের পড়া কমপ্লিট হবে। তারপর ও তাদের কে হ্যা বলে দেয় শেষ কি হয় তা দেখতে চায়। কিন্তু ঝংকারের এডভাইজার শুনে বলে নিষেধ করা হয়েছে অফ ক্যাম্পাসে কিছু করা যাবেনা যা করার অন ক্যাম্পাসেই করতে হবে।
শেষ পর্যন্ত কি হয় তা দেখার আশায় যেভাবে সব চলছিলো সেভাবেই চলতে দেয়। মে মাসে ইন্টার্ন শুরু হবে তা ঝংকারকে ইমেইলের মাধ্যমে জানানো হয়। আর তারপর প্রোডাকশন এর ভিপি ফ্যাক্টরি দেখাবে এবং কাজ বুঝিয়ে দিবে। তাই ঝংকার ঠিক করলো যাইহোক না কেন আগে ফ্যাক্টরি দেখে আসবে তারজন্য রাইড ও ঠিক করে। ভিএ হস্পিটাল রিসার্চ প্রজেক্টে একজন কে হায়ার করে সামারের জন্য, সোজা বাংলায় বললে কাজ হলো কাজ করবে হসপিটালে কিন্তু রিপোর্ট করবে ডিপার্টমেন্ট এর প্রজেক্ট টিমের, আর তাকে বেতন দিবে ডিপার্টমেন্ট এর গবেষণা ফান্ড। ঝংকার এমন কিছুর আশা করছে, এই টাইপের কিছু কাজ বিটিডি এর সাথে করলে সে তাদের ফ্যাক্টরিতে গেলেও কাজ করবে ডিপার্টমেন্ট এর আন্ডারে এবং ডিপার্টমেন্ট তাকে পে করবে। এরকম টা করতে হলে তাকে ৩ টা সমস্যার সমাধান করতে হবে তারমধ্যে ফার্স্টে কোম্পানিকে রাজি করাতে হবে। আর দ্বিতীয় হলো যেকোন এক ফ্যাকাল্টিকে রাজি করানো বাধ্যতামূলক আর সর্বশেষ হলো সবই এই সপ্তাহে করতে হবে।
ভাগ্য ভালো যে সকল সমস্যার সমাধান হয়, তবে এক যায়গায় বিপদ আসে আর তা হলো যে ফ্যাকাল্টি এর ব্যাপারে কিছুই জানেনা সে ফ্যাকাল্টির নাম বলতে হয়েছে তাকে যখন এইচআর জিজ্ঞেস করে কোন ফ্যাকাল্টি। পরে বাসায় গিয়ে ভার্সিটির ওয়েবসাইট থেকে সেই ফ্যাকালটিতে কল করে কনভিন্স করতে চাইলে বিশেষ লাভ হয় না। আর সেজন্য সে তাদের অফিসে গিয়ে তাদের আন্ডারে একটি কোর্সের রেজিস্টেশন করে। অফিসিয়ালি ইন্টার্ন করতে না পেরেও একটা সাকসেসফুল সামার দেখে নিজেই অবাক এবং এর পিছনের সব কারণই লজিক্যাল মনে হতে লাগলো তার। কিন্তু যখন কোন মানুষ এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তখন শুধু বাধার দেয়াল দেখে, চারপাশের মানুষ গুলা তাদের অকারণেই ঘিরে ধরে এবং এগিয়ে যাওয়া থেকে আটকে রাখতে চায়। আর দিনশেষে তারা এগিয়ে যেতে পারলেই সফল।
ঝংকার মাহবুবের বই:-
ঝংকার মাহবুব অনেকগুলি বই রচনা করেছেন মানুষের জন্য, যারা তার বই পড়ে উপকৃত হয়েছেন তাদের সংখ্যা ও কম নয়। আর তার বই গুলো মানুষের এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যেই সৃষ্টি। তার বইএর মধ্যে ২ধরণের বই উল্লেখযোগ্য প্রথমটি হলো আত্মউন্নয়নমূলক এবং দ্বিতীয়টি হলো প্রোগ্রামিং সম্পর্কে।
আত্মউন্নয়নমূলক:-
এই বই মানুষদের নিজেদেরকেই বই বুঝায় জানায় শেখায় তাদের নিজেরদের ভিতরের মানুষটাকে। এই বই এর পাঠকরা বাহ্যিক দিক থেকে নয় আত্মিক থেকেই পরিবর্তন হয়। তাদের চিন্তাভাবনার পরিবর্তন হয়। জীবনকে নতুন করে বুঝতে জানতে শিখে।
প্রোগ্রামিং:-
প্রোগ্রামিং নিয়ে যত রকমের প্রশ্ন উত্তর সমস্যা সমাধান এরকম সবধরণের সমস্যার সমাধান স্বরূপ তার এই বই গুলো, একটার পর একটার সৃষ্টি ধারাবাহিক আকারে সমস্যার সমাধান রূপে।
তার উল্লেখযোগ্য বই গুলোর কয়েকটির আলোচনা নিম্নরূপ:-
প্রোগ্রামিংয়ের চৌদ্দগোষ্ঠী:-
প্রোগ্রামিং এর বেসিক ক্লিয়ার এরপর কি করবে? কয়েকটা বই পড়া হয়েছে এ টপিকে এর পর কি করণীয়? প্রোগ্রামিং এর কিছুটা পারি এরপর কি করা উচিত এরকম হাজার রকমের উত্তর স্বরুপ এই বই।
এই বই এর মেইন ৩টা উদ্দেশ্য:-
১. প্রোগ্রামিং এর কিছুটা জেনে এরপর কি করবে তা না জানলে এটা তাদের জন্যই,এই বই তাদের পরবর্তী ধাপ দেখাবে।
২. প্রোগ্রামিং শিখে চাকরির জন্য পূর্ণ গাইডলাইন স্বরুপ এই বই।
৩. প্রোগ্রামিং এর ইন্টার্ভিউতে যে কোন কোম্পানি যেরকমই প্রশ্ন করুকনা কেন তার সহজ দিকনির্দেশনা এখানে দেওয়া হয়েছে।
এই বই এর ভূমিকায় লেখক বলেন:- হুজুগে, বাপের হোটেল বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, দুর্যোগে, অথবা গুগল সহ বড় বড় কোম্পানিতে চাকরীর সুযোগে অথবা যেকোন কারণেই হোক আগ্রহী হলে তাকে প্রোগ্রামার হিসেবে একটু লেভেলে উঠতে হবে।
প্রোগ্রামিং এর বলদ টু বস:-
যারা ভয় পায় অথবা কনফিউজড আর নয়তো ফাঁকিবাজিতে প্রোগ্রামিং শিখতে পারেনা অথবা পড়তে গেলে ছন্দপতন হারিয়ে মজা পায়না এটা তাদের জন্য। মজার ছলে প্রোগ্রামিং শেখানোর জন্যই ঝংকার মাহবুবের এই সৃষ্টি।
বইটার উদ্দেশ্য হলো সবচেয়ে সহজ পদ্ধতিতে প্রোগ্রামিং শেখানো,এবং এ পথে আগ্রহ বাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা, আর দেখিয়ে দেওয়া যে, সবাই বস, বলদের মুখোশের পিছনে।
হাবলুদের জন্য প্রোগ্রামিং:–
যারা ভয় পেয়ে প্রোগ্রামিং শিখতে পারেনা, কঠিন মনে করে শিখতে পারেনা আর নয়তো ম্যাথ এর স্টুডেন্ট না বলে শিখতে পারবেনা এমন চিন্তাভাবনা নিয়ে থাকে এই বই তাদের জন্য। যারা সামান্য সামান্য জানে তারাও এটা পড়তে পারবে, আর স্মার্টফোনে কোন কিছু ইন্সটল না করেও প্র্যাক্টিস করা যাবে।
রিচার্জ ইয়োর ডাউন ব্যাটারি:-
আত্ম উন্নয়ন মূলক এই বই টি মানুষকে জীবন সম্পর্কে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করে, মানুষ তার মোবাইলের চার্জ নিয়ে ভেবে মরে কিন্তু নিজের চার্জ কতটুকু তা নিয়ে ভাবেনা।
বইয়ের উদ্দেশ্য:- মানুষের জীবনের জন্য, স্বপ্নের পথে হাঁটার জন্য অথবা নিজেকে চার্জ দেওয়ার জন্য একটা চার্জার দরকার, আর এ বই সেরকমই একটা বই। যা মানুষকে চার্জ দিতে সক্ষম।
এই বই মানুষকে শিখায় কিভাবে হাল না ছেড়ে লেগে থাকা যায়, কিভাবে সর্ব অবস্থায় লেগে থাকা যায় এবং কিভাবে জীবনে পিছিয়ে পড়েও আবার ব্যাক করা যায়।
নেভার স্টপ লার্নিং:-
বই বলতেই মানুষ ২রকম বই কে বুঝে তার মধ্যে একটা হল একাডেমিক আর অন্যটা হলো, গল্প,উপন্যাসের বই। কিন্তু এর বাইরেও যে আত্ম উন্নয়নমূলক বই আছে তা কয়জনেই বা জানে, কয়জনই বা এমন বই খুঁজে জীবন কে আমূলে পরিবর্তনের জন্য? এটা তেমনই একটা বই, যেটা তার পাঠককে এক ভিন্ন জগতে নিয়ে যাবে মানুষ চেনানোর মাধ্যমে। এই বই মানুষকে চেনায়, মানুষের পারিপার্শ্বিক অবস্থানুযায়ী বাঁচতে শেখাবে, বুঝতে শেখাবে। জীবন চলার পথে নানা ঝড় ঝাপটায় মোকাবেলা করতে শেখাবে।
গ্রোয়িং থ্রু স্ট্রাগল
হাল না ছাড়া এক জীবনযোদ্ধার জার্নি তুলে ধরা হয়েছে ২০২৪ বইমেলায় প্রকাশিত গ্রোয়িং থ্রু স্ট্রাগল বইতে। লেখকের পার্সোনাল, ফাইনান্সিয়াল এবং প্রফেশনাল লাইফের বাধা, কষ্ট, লাঞ্ছনা, প্রতারণা, বিশ্বাসঘাতকতার বিপরীতে হাল ছেড়ে না দিয়ে টিকে থাকার, সেটেল হওয়ার, চ্যালেঞ্জ নেয়ার, এগিয়ে যাওয়ার একটা জার্নি উঠে আসছে এই বইতে।
লেখকের সকল বইয়ের বিস্তারিত জানতে এবং কিছু অংশ বিনামূল্যে পড়তে ভিজিট করুন রকমারি.কম।
সমাপিকা
“ঝংকার মাহবুব” নামটা আজ সবার কাছে বড্ড পরিচিত, নাম শুনলেই যার হাস্যজ্জ্বল চেহেরা চোখে আসে তিনি তার জীবনে ততটা সুখি ছিলেননা। যার জীবনটা কেটেছে বিভীষিকাময়। একদম ছোট্ট বেলা থেকে কেটেছে নানা ঝামেলা আর কষ্টে। এরপর জীবন চলার পথে অথবা এগিয়ে যাওয়ার পথে এসেছে নান রকম সমস্যা। সে সকল সমস্যাকে বিদায় জানানোর জন্য কাজ করে গেছেন, কষ্ট করে গেছেন এবং শিখে গেছেন। যে কষ্টের শেষ ছিলো, আর তাই শেষ হয়েছে। মাঝখানে ঝংকার মাহবুব কে কষ্ট জর্জরিত করেছে। যে মানুষ টা এত্ত কষ্টে থেকেও ভাগ্যকে দোষারোপ করেনা। যা হাতে আছে, যা কাছে আছে তা নিয়েই এগিয়ে যেতে চান এবং অন্যকে এগিয়ে যেতে বলে বেড়ায়। যে সাহায্যকারী রূপে অন্যদের কাছে পরিচিত। সেরা লেখক, সেরা ইউটিউবার এবং সেরাদের সেরা হিসেবে বিবেচিত। যার আগামি ১০ বছরে ১০ লক্ষ হাবলু তৈরি করার স্বপ্ন আছে। আরও একজন সহজভাবে শেখানোর মানুষকে চিনে নিন.
Leave a Reply